IQNA

দুনিয়া ও পরকালের মধ্যে সংযোগ

19:49 - April 25, 2022
সংবাদ: 3471761
তেহরান (ইকনা): একটি ক্ষণস্থায়ী জীবনের পরে, মানুষ একটি নতুন পর্বে প্রবেশ করে। মৃত্যুর পর জীবনের মান নিয়ে অনেক ধারণা আছে; কিন্তু বস্তুগত জীবন এবং অনন্ত জীবনের মধ্যে সংযোগ রয়েছে। প্রশ্ন হল: এই সংযোগ কি?

মানুষের অন্যতম প্রশ্ন হল, বস্তুজগতের জীবনের শেষে, পরবর্তী জীবন কী ধরণের হবে? মৃত্যুর পর মানুষের বস্তুগত জীবন কি এবং এই জীবনের সাথে কি আধ্যাত্মিক জগতের সম্পর্ক থাকতে পারে? অথবা বস্তুগত জীবন এবং পরকালের জীবন কী আলাদা ও পৃথক স্থানে গঠিত?
 
ইমাম আলী (আ.) বিভিন্ন পরিস্থিতিতে বস্তুজগতকে ক্ষণস্থায়ী জীবন এবং পরকালের জগৎকে অনন্ত জীবন বলে বর্ণনা করেছেন।
 
এই পৃথিবী থেকে মানুষকে বিদায় নিতে হবে। আর মানুষের এই চির বিদায়ের বিষয়টি অতি স্পষ্ট। আমাদের পূর্ব যারা ছিলেন, তাদের নীরব কবরস্থানে স্থান হয়েছে। অথবা প্রতিনিয়ত আমাদের চারপাশের মানুষ কোন না কোন কারণে মৃত্যুবরণ করছেন। তাদের স্থানও নীরব কবরস্থানে হচ্ছে। আপাতদৃষ্টিতে তাদের (মৃত ব্যক্তিদের) ভুবনকে নীরব বলে মনে হয়, কিন্তু তারা আমাদের সাথে বিভিন্ন উপায়ে কথা বলেন।
 
وَ أُوصِيكُمْ بِذِكْرِ الْمَوْتِ وَ إِقْلَالِ الْغَفْلَةِ عَنْهُ، وَ كَيْفَ غَفْلَتُكُمْ عَمَّا لَيْسَ يُغْفِلُكُمْ وَ طَمَعُكُمْ فِيمَنْ لَيْسَ يُمْهِلُكُمْ؛ فَكَفَى وَاعِظاً بِمَوْتَى عَايَنْتُمُوهُمْ، حُمِلُوا إِلَى قُبُورِهِمْ غَيْرَ رَاكِبينَ وَ أُنْزِلُوا فِيهَا غَيْرَ نَازِلِينَ، فَكَأَنَّهُمْ [كَأَنَّهُمْ] لَمْ يَكُونُوا لِلدُّنْيَا عُمَّاراً وَ كَأَنَّ الْآخِرَةَ لَمْ تَزَلْ لَهُمْ دَاراً، أَوْحَشُوا مَا كَانُوا يُوطِنُونَ وَ أَوْطَنُوا مَا كَانُوا يُوحِشُونَ، وَ اشْتَغَلُوا بِمَا فَارَقُوا وَ أَضَاعُوا مَا إِلَيْهِ انْتَقَلُوا، لَا عَنْ قَبِيحٍ يَسْتَطِيعُونَ انْتِقَالًا وَ لَا فِي حَسَنٍ يَسْتَطِيعُونَ ازْدِيَاداً، أَنِسُوا بِالدُّنْيَا فَغَرَّتْهُمْ وَ وَثِقُوا بِهَا فَصَرَعَتْهُمْ.
 
ইমাম আলী (আ.) বলেছেন: আমি তোমাকে ওসিয়ত করছি মৃত্যুকে বেশি বেশি স্মরণ করো এবং মৃত্যুকে অবহেলা করো না। তুমি কীভাবে এমন কিছুকে অবহেলা করতে পারো, যা তোমাকে কখনই অবহেলা করবে না এবং যে (মৃত্যুর ফেরেশতা) তোমাকে অবকাশ দেয় না, তার প্রতি কীভাবে এতো লোভী হতে পারো।
 
তোমারা মৃতদের নিজ চোখে দেখ। তাদের অনিচ্ছা সত্ত্বেও তাদেরকে কবরস্থানে নিয়ে যাওয়া হয় এবং কবরে শায়িত করা হয়। অথচ সেদিন তারা কবরে অবতরণ করতে সক্ষম না এবং তারা সেখানে অবতরণ করতে চাই’ও না। যেন তারা কখনোই এই বস্তুগত পৃথিবীতে ছিল না এবং তাদের চিরস্থায়ী আবাস হল পরকাল।
নাহজুল বালাগা, খুতবা নং: ১৮৮।
 
ইমাম আলী (আ.) সতর্ক করে বলেছেন যে, শীঘ্রই অথবা দেরীতে এই পৃথিবীকে বিদায় জানিয়ে অন্য জগতে যেতে প্রস্তুত হও এবং সুযোগ হাত ছাড়া হওয়ার পূর্বেই এই বিপদজনক যাত্রার জন্য যা প্রয়োজন তা প্রস্তুত কর। 
 
ইমাম আলী (আ.)-এর দৃষ্টিতে বস্তুজগৎ অতি মূল্যহীন, কিন্তু বস্তুগত জগত যখন পরকালের সফলতা অর্জনের কারণ হয়ে দাঁড়ায়, তখন তা অত্যন্ত মূল্যবান এবং যদি কেও এই সুযোগ অর্থাৎ পরকালের জন্য ইহকালকে উত্তম রূপে ব্যবহার না করতে পারে, তাহলে তা আফসোসের কারণ হয়ে দাঁড়াবে।
 
দুনিয়া ও পরকালের সম্পর্কের বিষয়ে নবী করিম (সা.) বলেছেন:
 
اَلدُّنْيَا مَزْرَعةُ الآخِرَةِ
 
‘দুনিয়া আখিরাতের শস্যক্ষেত্র’
আওয়ালীল অলী, প্রথম খণ্ড, পৃ: ২৬৭
 
শস্য ক্ষেত্রে মানুষ যেরূপ চাষাবাদ করে সেরূপ ফল লাভ করে। যেমন: কেউ গম চাষ করলে, তার ফলস্বরূপ সে গম লাভ করবে আর কেউ সবজি চাষ করলে, তার ফলস্বরূপ সে সবজি লাভ করবে। একই রূপে চাষাবাদের জন্য যদি কেউ অধিক পরিশ্রম করে, তাহলে সে তার ফসল'ও ভালো হবে এবং যদি কেউ অলসতা করে, তাহলে ফসল ভালো হবে না।
 
দুনিয়া ও আখিরাতের মধ্যে সম্পর্ক ঠিক তেমন'ই। আমরা যদি দুনিয়াতে ভাল কাজ করি, আল্লাহর আদেশ-নিষেধ মান্য করি, তাহলে আখিরাতে ভালো ফল লাভ করব। আর যদি নিজ ইচ্ছা মত চলাফেরা করি, অন্যায় ও পাপ কাজ করি, তাহলে আমরা পরকালে কঠিন শাস্তির সম্মুখীন হব।
 
সুতরাং পরকালের অনন্ত জীবনের জন্য আমাদেরকে এই দুনিয়াতেই প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে।

 

সংশ্লিষ্ট খবর
captcha